বিবিসির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করুক সরকার

প্রসেনজিৎ রায়, ভারত

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৩, ০৭:৩৩ পিএম


বিবিসির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করুক সরকার

ছবিঃ একাত্তর পোস্ট

একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ব্রিটেন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসির বিরুদ্ধে গত প্রায় তিনমাস যাবৎ প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে ভারতে। মুলত বিজেপি দল এবং বিজেপির অনুগামি সংগঠনের তরফেই এসব প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে। 

এই প্রতিবাদ আন্দোলনের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের দাবি বিবিসি গুজরাট দাঙ্গার উপর তাদের সাম্প্রতিক একটি তথ্য চিত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অপমান করেছে। ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার উপর তৈরি তথ্যচিত্রটি নিয়ে তীব্র বিতর্কও হয়। ভারতের আপত্তি সত্বেও বিবিসি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই তথ্য চিত্রটি প্রদর্শন করেছে। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুলত গুজরাটের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘ তেরো বছর গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী ও ছিলেন। এর জন্য ভারত সরকার এই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিক, গুজরাটের বিজেপি বিধায়করা বিধানসভায় এই দাবি তুলে। কংগ্রেসের বিধায়করা সেসময় বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করে।

শুক্রবার এই মর্মে বিজেপি বিধায়কদের আনা প্রস্তাব বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতায়  পাশ হয়ে যায় গুজরাত বিধানসভায়।

বিধানসভায় বিজেপির পরিষদীয় দলের নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলসহ মন্ত্রিসভার  সদস্যগণ ও বিজেপি বিধায়করা মিলিত ভাবে এই প্রস্তাবটি বিধানসভায় পাশ করিয়ে নেন। এ সময় কংগ্রেস বিধায়করা এ জাতীয় বিল তথা প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিধানসভা ত্যাগ করলেও প্রস্তাবটি ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যায়। প্রসঙ্গত এই প্রাসঙ্গিক আলোচনায় হট্যগোলের জন্য বৃহষ্পতিবারও কংগ্রেস বিধায়কদের বহিষ্কার করেছিলেন স্পিকার। 

শুক্রবার বিজেপি বিধায়কদের পক্ষে বিধায়ক বিপুল প্যাটেল প্রথম বিবিসির তথ্যচিত্রের সমালোচনা ও বিরোধিতা করে একটি  প্রস্তাব আনেন।

এই প্রস্তাবের উপর আলোচনার অনুমতি দেন স্পিকার। প্রস্তাব প্রসঙ্গে বিজেপি বিধায়ক মণীষা ওয়াকিল জানান, বিবিসির এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি এনজিও গুজরাত এবং ভারতকে বিশ্বময় কলঙ্কিত করেছে। ২০২২ সালের গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তার রায় দিয়েছে। সেই সময় বিশেষ তদন্তকারী দল SIT গঠিত হয়েছিল৷ তারা তাদের তদন্ত করে রাজ্য সরকারকে ক্লিন চিট দিয়েছে৷

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গোধরা স্টেশনের কাছে ট্রেনে আগুন লাগে। এতে ৫৯ জন করসেবকের পুড়ে মৃত্যু হয়। এরপর জ্বলে ওঠে পুরো গুজরাত। তিন দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভয়াবহ রূপ নেয়। আর সে সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বহু মুসলমান প্রাণ হারান৷ বিবিসির ‘ইন্ডিয়া দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ তথ্যচিত্রটি এই ঘটনার উপর তৈরি৷ এতে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশে৷

তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্বটি ১৭ জানুয়ারি সম্প্রচার হয়৷ দ্বিতীয় পর্বটি সম্প্রচারিত ২৪ জানুয়ারি৷ এই দুইটি পর্বের প্রদর্শনই সম্প্রচারের সাথে সাথেই ভারতে নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার ৷ 

শুধু এই তথ্যচিত্রই নয়, ভারতে বিবিসির সম্প্রচার নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ও দিল্লি, মুম্বাই আহমেদাবাদ সহ ভারতের বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে বিজেপির অনুগামি একাধিক সংগঠন। এবার সংসদীয় রূপ পেলো বিজেপির বিবিসি বিরোধী অবস্থান।

শুক্রবার প্রস্তাবটি পাশের পর প্রাসঙ্গিক আলোচনায় বিজেপি বিধায়ক অমিত ঠাকুর প্রশ্ন তোলেন ২০ বছর আগের বিষয়টি বিশেষ এজেন্ডায় তথ্যচিত্রের মাধ্যমে সামনে আনা হয়েছে। এতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। ভারতকে কলঙ্কিত করা ও দেশে চলমান শান্ত পরিবেশে আগুন জ্বালাতে চাইছে ষড়যন্ত্র কারীরা।

বিজেপি বিধায়কদের দাবি মানুষ অনেক আগেই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ভুলে গিয়েছে৷ তার পরেও এই বিস্মৃত বিষয়টিকে এভাবে সামনে নিয়ে আসা ভারতের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সর্বোপরি আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের প্রভাবশালী হয়ে উঠায় ঈর্ষান্বিত বিবিসির মত আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহ। ভারতের এই ক্রম বিকাশের গতিকে স্তব্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতকে কলঙ্কিত করার গভীর চক্রান্তের অংশ এই তথ্য চিত্র।

প্রসঙ্গত, ইতিপূর্বে বিবিসির গুজরাট দাঙ্গা কেন্দ্রীক তথ্য চিত্র বিতর্কের মধ্যেই ভারতের দিল্লি ও মুম্বাই দপ্তরে আয়কর হানাদারি চালায় ভারতের আয়কর দপ্তর। যদিও একে বিবিসির এই দুই দপ্তরে আর্থিক বিনিময়ের সমীক্ষার জন্যই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে জানিয়েছিল ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক।

তবে বিবিসির দপ্তরে আয়কর হানাদারিকেও আলোচ্য তথ্যচিত্রের জন্য বিবিসির প্রতি ভারত সরকারের প্রতিহিংসা পরায়ণতার অভিযোগ করে বিবিসি।

Link copied