ভারতে পরের লোকসভা ভোটে হারতে চলেছে মোদী! আভ্যন্তরীণ সমীক্ষা তাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে কার্যতএকা লড়াই করতে হবে মোদীর বিজেপিকে। অতএব লক্ষ্য ৩৫০ আসন। এই সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই টার্গেট আদৌ পূরণ করা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

গত বছর রাজ্যে রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব চিহ্নিত করেছিল এমন ১৪৪টি লোকসভা আসনকে, যেখানে জয় পাওয়া কঠিন। এরপর ওই সংখ্যাটি বেড়ে হয় ১৬০। এবার তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কঠিন আসনের টার্গেট এখন ১৮০। অর্থাৎ ৩৫০ দূরঅস্ত, আগামী লোকসভা ভোটে কার্যত তার অর্ধেক আসনেই জয় নিয়ে শঙ্কায় বিজেপি৷ ওই ১৮০ আসনের সিংহভাগ না জিততে পারলে গরিষ্ঠতা অধরা থাকতে পারে।

তাই মঙ্গলবার শেষ হওয়া জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক থেকেই দলকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, জগৎপ্রকাশ নাড্ডারা। গেরুয়া শিবিরের নেতা-কর্মীদের প্রতি তাঁদের স্পষ্ট বার্তা— এব্যাপারে কোনওরকম শৈথিল্য যেন না দেখানো হয়।

কেন ৩৫০ আসনকে টার্গেট করা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর সোজা। এবার বিজেপি একপ্রকার সঙ্গীহীন। ২০১৯ সালে মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৪৩৭টিতে লড়াই করেছিল তারা। বাকি আসনে প্রার্থী করা হয়েছিল এনডিএ শরিকদের।

গত নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়েছিল ৩০৩টি আসন। জোটসঙ্গীরা পেয়েছিল বাকি ৪৮টি, যার মধ্যে অন্যতম দল গুল হলো-  শিবসেনা(১৮), নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল (১৬) এবং রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (৬)।

এছাড়াও ছিল শিরোমণি অকালির মতো আরও একঝাঁক দল, যারা একটি অথবা দু’টি করে আসনে জয়ী হয়। মোট এনডিএর ঝুলিতে যায় ৩৫১টি আসন। কিন্তু ২০১৯ সালের পর কোনও শরিককে ধরে রাখতে পারেননি নরেন্দ্র মোদি। শিবসেনা, সংযুক্ত জনতা দল, অকালি দল—অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমল থেকে যে দলগুলি এনডিএতে ছিল, তারা সকলে একে একে বিজেপির হাত ছেড়ে দিয়েছে।

প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি নিজেরা ছত্রভঙ্গ। আর তার কারণও বিজেপির আগ্রাসী রাজনীতি। এমতাবস্থায় ২০২৪ সালে গোটা ভারতে একা লড়াই করতে হবে বিজেপিকে আর যত সমস্যা সেখানেই।

উত্তর ও মধ্য ভারত ছাড়া বিজেপির সম্ভাব্য জয়ী আসন কোথায়? দক্ষিণে একমাত্র কর্ণাটক। আর আসন্ন বিধানসভা ভোটে সেখানেও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা চরমে। আর সেই সম্ভাবনা বাস্তব হলে, আক্ষরিক অর্থে দাক্ষিণাত্য বিজেপি-মুক্ত হবে।

মূলত এই কারণেই মোদির দল এমন বহু আসনকে টার্গেট করেছে, যেগুলিতে ২০১৯ সালে অল্প মার্জিনে হেরেছে অথবা জিতেছে। বহু স্বল্প মার্জিনে জয় পরাজয়ের নিষ্পত্তি হওয়া আসনে আগামী লোকসভা ভোটে তারা পরাস্ত হয়ে যেতে পারে।

সেই ক্ষতিপূরণের জন্য টার্গেট করা হয়েছে অন্য আসন। তবে ৩৫০টির মধ্যে ১৮০টি আসনকেই কঠিন পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করায় গরিষ্ঠতা পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে।