লিবিয়ায় বন্যায় রাজবাড়ীর দুই যুবকের মৃত্যু
প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:০৬ এএম

ছবিঃ সংগৃহীত
লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় ছয় বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে রাজবাড়ীর শাহিন ও সুজন নামে দুই যুবক রয়েছে।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এছাড়াও দেশটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর দেরনায় আরও কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলার নিহতরা হলেন, জেলার পাংশা উপজেলার যশাই ইউনিয়নের ধোপাকেল্লা গ্রামের দুলাল খাঁন এর ছেলে সুজন খান (২৩) ও একই উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামের আরশেদ মন্ডলের ছেলে শাহিন শেখ (৪০)।
লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেসবুক পেজে বিবৃতিতে জানানো হয়, লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণসহ সকলের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও বন্যার তাণ্ডবে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল বিশেষত দারনা, সাহাত, আল-বাইদা, আল-মার্জ শহর ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে দারনা বাঁধের ভয়াবহ ধসে সৃষ্ট বন্যায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে আরও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এমতাবস্থায় দারনা শহরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণের সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যসহ উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে দারনা শহরে বসবাসরত ৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের মধ্য থেকে ৪ জনের প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া গেছে।
তারা হলেন রাজবাড়ি জেলার শাহীন ও সুজন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার মামুন ও শিহাব। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত অবশিষ্ট ২ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া দারনা শহরে বসবাসরত আরও কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি নিখোঁজ থাকার আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
এ প্রেক্ষিতে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের তথ্য জানতে এবং ঘূর্ণিঝড়ে নিখোঁজ প্রবাসীদের তথ্য জানানোর জন্য দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. রাসেল মিয়া (মোবাইল নম্বরঃ +২১৮৯১৮৫৮০৮৯৮) এর সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
শাহিনের বাবা আরশেদ মন্ডল মুঠোফোনে বলেন, প্রায় ১০ মাস আগে অনেক কষ্ট করে শাহিনকে লিবিয়াতে পাঠায়। সবকিছু ভালোই চলছিলো। হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেছে আমার। লিবিয়ার বন্যায় আমার ছেলে মারা গেছে। তাকে ওই দেশেই দাফন করা হয়েছে।
সুজনের বড় ভাই জুবায়ের খান মুঠোফোন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চার ভাইবোন। সুজন আমার ছোট। ২০১৯ সালে সুজন লিবিয়াতে যায়। অনেক ছোট বয়স থেকে ও প্রবাসে থাকে। সংসারে সবধরনের খাবারই সে চালায়। গতকাল হঠাৎ খবর পেলাম সুজন লিবিয়াতে ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেছে। তার মরদেহ কি অবস্থায় আছে জানি না। তবে আমার মামাতো ভাই লিবিয়াতে থাকে। তার মাধ্যমে একবার খবর পেয়েছি সুজনের লাশ দাফন হয়ে গেছে। আবার খবর পেয়েছি লাশ আছে। সঠিক কোন তথ্য এখন পর্যন্ত পাইনি।
সুজনের মৃত্যুতে আমাদের পরিবারে এখন শোকের মাতম চলছে।
যশাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হোসেন খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমার ইউনিয়নে সুজন খান নামের এক যুবক লিবিয়াতে মারা গেছে। আমি তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। তার অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
হাবাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন খান বলেন, আমার ইউনিয়নের শাহিন নামের এক যুবক লিবিয়াতে মারা গেছেন।
রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার জি.এম.আবুল কালাম আজাদ জানান, বুধবার রাতে তারা বিষয়টি জানার পর মৃতদের পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা চালান। রাত ১০টার দিকে মৃত দুই জনের পরিচয় উদ্ধার করতে পেরেছি।