যৌবন হারিয়ে পুনর্ভবা নদী এখন খেলার মাঠ

হায়দার মুহাম্মদ নাসির, সাপাহার (নওগাঁ)

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২০ এএম


যৌবন হারিয়ে পুনর্ভবা নদী এখন খেলার মাঠ

ছবিঃ একাত্তর পোস্ট

একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মানবসৃষ্ট প্রতিকূলতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ দেশে দিনের পর দিন নাব্যতা হারিয়ে নদীগুলো আজ চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সীমান্তবর্তী এক সময়ের খরস্রোতা পুনর্ভবা নদীটিও এখন শুকিয়ে খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিকালে নদী পাড়ের ছেলেরা শুকনো এই নদীগর্ভে নেমে বালির চরে ফুটবল খেলছে।

সরেজমিনে আজ বিকেলে নদী দেখতে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্ত:সীমান্ত নদী পুনর্ভবা, এটি বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের দিনাজপুর জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২২৩কিলোমিটার ও গড় প্রস্ত ১০২মিটার, পুনর্ভবা নদীর প্রাচীন উৎস ব্রাহ্মনপুর বরেন্দ্র ভূমি।

অতীতে এ নদীটি তীব্র খরস্রোতা ও প্রায় সারাবছর এ নদীতে পানি থাকত। সে সময় নদী পাড়ের মানুষ ওই নদীর পানি দিয়ে মাঠে নানা রকমের ফসল উৎপাদন করত।

তাছাড়াও নদীতে বিভিন্ন মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত নদী পাড়ের অনেক মানুষ। কালের বিবর্তনে যৌবন হারিয়ে বর্তমানে নদীটি পরিনত হয়েছ মরাখালে। দেখলে বড়জোর মনে হবে যেন বর্ষকালে পানি নি:ষ্কাশনের একটি খাল এটি।

উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর পাতাড়ী ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মো: সানাউল্লার  কাছে জানতে চাইলে তিনি একাত্তর পোস্ট কে জানান,পাকিস্থান শাসনামল বা তারও পূর্ববর্তী সময়ে নদীটিতে সারাবছর পানি  থাকত। সে সময় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন না থাকায় এই নদীর বুকে নৌকা যোগে মানুষ বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে পণ্য ক্রয় বিক্রয় করত। তাছাড়াও নৌকা সাজিয়ে বিয়ে ও আত্মীয় -স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যেত এলাকাবাসী। ভারত-পাকিস্তান দেশ ভাগের সময় ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি মোতাবেক এই নদীটি উভয় দেশের আন্ত:সীমানা হিসেবে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। চুক্তি মোতাবেক নদীর মাঝখানে উভয় দেশের সীমানা নির্ধারিত হয়। যখন যে অঞ্চল যে দিকে ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলিন হবে তখন সে অঞ্চল সেদেশের ভূখন্ড বলে বিবেচিত হবে এবং নদীর মাঝখানে সীমান্ত পিলার বলে ধরা হবে।

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পুনর্ভবা নদীটি সাপাহার উপজেলার উত্তর পাতাড়ী গ্রামের কাবলীরঘাটে নেমে বাংলাদেশের আন্ত:সীমানা নদী হয়ে কলমুডাঙ্গা, পোরশার নিতপুর,চাঁপাই নবাবগঞ্জের রোকনপুর হয়ে মহানন্দা নদীর মোহনায় মিলত হয়ে পদ্মা নদীতে পতিত হয়েছে।

এক কালের খরস্রোতা এই নদীটি এখন তার অতীত ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের গৌরব হারিয়ে শুকনো খাল ও খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। এ এলাকার  সকল স্তরের মানুষের প্রানের দাবি নদীটি খনন সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ  করা হোক। তাহলে নদীটি আবারো তার পুরানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।

পানির প্রবাহ ঠিক থাকলে নদীর পাড়ের লোকজন হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করতে পারবে। যার ফলে এলাকাবাসীর আয়ের পথ উম্মোচিত হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

Link copied