ফুলবাড়িয়ায় ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী ২০২৩, ০৯:২৭ এএম
ছবিঃ একাত্তর পোস্ট
লাখো জনতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলায় পুব্বা দল বিজয়ী হয়েছে।
শনিবার পৌষের শেষ বিকেলে দেওখলা ইউনিয়নের লক্ষিপুরের বড়ই আটা নামক স্থানে হুমগুটি খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক হাজার খেলোয়াড় এ খেলায় অংশ নেন। খেলা দেখতে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়।
ব্রিটিশ আমলে জমিদারদের জমির বিরোধের মীমাংসা করতে আয়োজন হয়েছিল এ খেলার। পরে আমন ধান কাটা শেষে ও বোরো ধান আবাদের আগে প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য আয়োজন করা হতো এ খেলার। এরই ধারাবাহিকতায় আড়াইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা।
জানা যায়, মূলত ব্রিটিশ আমলে জমিদারদের জমির বিরোধ মীমাংসার জন্যই গুটি খেলার আয়োজন করা হয়। খেলার শর্ত ছিল-গুটি যাদের সীমানার দিকে বেশি নিয়ে গুম করতে পারবে, তারা হবেন তালুক। পরাজিত দল হবে পরগনা। সে সময় মুক্তাগাছার জমিদার বিজয়ী হন এবং তাদের আওতাভুক্ত স্থানকে তালুক নামকরণ করা হয়। তখনকার সেই খেলা আজও ধারণ করে আসছে সেখানকার মানুষ।
খেলার তারিখ নির্ধারণ করা হয় বাংলা সাল হিসেব করে। পৌষের শেষদিন অনুষ্ঠিত হয় এ খেলা। উপজেলার লক্ষ্মীপুর, বড়ই আটা, বাটিপাড়া, বালাশ্বর, চরকালিবাজাইল, তেলিগ্রাম, সাড়ুটিয়া, ইচাইল, কাতলাসেনসহ অন্তত ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে। ঘরে ঘরে চলে নতুন ধানের পিঠা-পুলির উৎসব। পিঠার মধ্যে অন্যতম নুন-মরিচের পিঠা, গুটা পিঠা, তেলের পিঠা, দুধ চিতই পিঠা, কলার পিঠা। গ্রামগুলোতে খেলার কয়েকদিন আগেই আসতে থাকে দূর-দূরান্তের আত্মীয়-স্বজন।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুর রহমান রবি, আড়াইশ বছরের বেশি সময়ের এ ঐতিহ্যবাহী গুটি খেলার শুরু করার একটি নির্দিষ্ট সময় থাকলে শেষ হওয়ার কোনো সময় থাকে না। তিনি আরো জানান, উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব , পশ্চিম এই ৪টি দিক বেঁধে খেলোয়াড়রা দলবেধে খেলায় অংশগ্রহণ করেন। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয় একেকটি দল। বিজয়ী পুব্বা দলটি গঠিত হয়েছে পুর্বদিকের কয়েকটি গ্রাম নিয়ে। তাই এই দলটির নাম করণ করা হয়েছে পুব্বা।
স্থানীয় আব্দুল মতিন বলেন, আমি নিজে গুটি খেলেছি। এখন বয়সের কারণে খেলি না। এটি আমাদের ফুলবাড়িয়ার ঐতিহ্য। খেলাটি এখনো বেঁচে আছে বিলুপ্ত হয় নাই ভাবতে অবাক লাগে। আজকের খেলা গভীর রাতে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হুমগুটি মিলন মেলার সভাপতি এবি সিদ্দিক বলেন, বিকাল তিনটার দিকে খেলা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে খেলোয়াড়রা আসছে। গুটি মূলত শক্তি পরীক্ষার খেলা। পুব্বা দলটি বেশী শক্তি প্রদর্শন করে তারা গুটিটি নিয়ে গেছে এবং তারাই বিজয়ী হয়েছে।
এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিলো।