ভূমিহীন মরিয়ম ত্রিশ বছর ধরে স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করছে

এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই (জয়পুরহাট)

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৯ পিএম


ভূমিহীন মরিয়ম ত্রিশ বছর ধরে স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করছে

ছবিঃ একাত্তর পোস্ট

একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মরিয়ম জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের দুরুঞ্জ নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুরের মেয়ে। ১৩ বছর আগে বিয়ে হয় বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার নূর ইসলাম (৫০) নামে এক ব্যক্তির সাথে। বিয়ের ১ বছর পর তাদের একটি মেয়ে সন্তান হয়। সন্তান জন্মের ৭ মাস পর মরিয়মের জমানো টাকা ও একটি গরু নিয়ে পালিয়ে যান স্বামী নূর ইসলাম।

কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজার সংলগ্ন মিলন স্যানিটারিতে হঠাৎ গিয়ে সাক্ষাৎ হয় ৪০ বছর বয়সী মরিয়মের সাথে। মরিয়ম তার সংগ্রামী জীবনের কথা তুলে ধরে বলেন, ৩০ বছর আগে বাবা মারা যান। দুঃখ-কষ্টে বড় হয় মরিয়ম। তিনি ১০ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন। এক সময় তার দুঃখ-কষ্ট দেখে কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা সংলগ্ন মিলন স্যানিটারির মালিক তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ দেন। সেই থেকে তিনি মিলন স্যানিটারিতে ২০ বছর ধরে সততার সাথে কাজ করে আসছেন।

সেখানে কাজ করা অবস্থায় পরিচয় হয় নূর ইসলামের সাথে। একপর্যায়ে তারা উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের এক বছর পর তাদের সংসারে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সন্তানের বয়স যখন ৭ মাস তখন স্বামী নূর ইসলাম তাকে না জানিয়ে হঠাৎ করে টাকা ও গরু নিয়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে শুরু হয় তার কষ্টের জীবন।

দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সাত মাসের এই ছোট সন্তানকে ঘাড়ে নিয়ে কাজ করেন তিনি। চিন্তায় চোখে ঘুম নাই। রাত জেগে চোখের পানি ফেলেন। এই দুঃসময়ে তাকে সাহস জুগিয়েছেন মিলন স্যানিটারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিলন আকন্দ। আল্লাহর পরে তিনি ছাড়া এই দুনিয়াতে তাকে দেখার আর কেউ নেই। তাকে ২০ বছর ধরে মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছেন। সেই থেকে এখন অব্দি থেমে নেই তার স্যানিটারির কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তার এ কাজ।

এরপর সামাল দিতে হয় নিজের সংসার ও সন্তানকে। জায়গা জমি কেনার কোনো সামর্থ্য না থাকায় সরকারি খাস জায়গায় টিনের বেড়া দিয়ে মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পৌর মেয়র বা কাউন্সিলরের কাছে অনেক অনুদান আসলেও ঈদে ৫-১০ কেজি চাল ছাড়া কোনো কিছুই পান না তিনি। চারশো টাকা দিন কষ্ট করে কাজ করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ কোনমতে সংসার চালাতে হয়। মেয়ে এখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। সে ছাড়া মেয়ের জীবনের কোনো মূল্য বা আশা নেই। সে একদিন অসুস্থ হলে মেয়েকে দেখার কেউ নেই। বিবাহের ১২ বছর পর তার স্বামী তাকে তালাকের কাগজ পাঠিয়ে দেন। এই ভাবেই কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলেন মরিয়ম।

স্যানিটারির প্রতিষ্ঠানের মালিক মিলন আকন্দ বলেন, মরিয়ম একটা বাড়িতে কাজ করার সময় মালিকের কিছু টাকা হারালে তার উপরে খুব নির্যাতন হয়। তখন সে অসহায় হয়ে পড়লে তার স্যানিটারি প্রতিষ্ঠানে তাকে কাজ দেয়া হয়। এখন সে সব কাজ পারে। তাই পুরুষ সমান তাকে বেতন দেয়া হয়। সে অনেক কষ্ট করে জীবন যাপন করছে।

পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিম মন্ডল বলেন, সে কষ্ট করে জীবন যাপন করছে তা জানি। তাকে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

তার বাসস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন, সে ঘর বরাদ্দের আবেদন করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে এবং তার সন্তানের যাবতীয় পড়ার খরচের ব্যবস্থা করা হবে।

Link copied