আশ্রয়ণের বরাদ্দকৃত ঘরে ঝুলছে তালা, বেশিরভাগই দিয়েছেন ভাড়া

এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই (জয়পুরহাট)

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৩১ এএম


আশ্রয়ণের বরাদ্দকৃত ঘরে ঝুলছে তালা, বেশিরভাগই দিয়েছেন ভাড়া

ছবিঃ একাত্তর পোস্ট

একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জয়পুরহাটের কালাইয়ে বিভিন্ন আশ্রয়ণের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বরাদ্দকৃত ঘরে ঝুলছে তালা। ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া আশ্রয়ণের ঘর মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে চলছে রমরমা ব্যবসা। নিজ দলের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও প্রভাব খাটিয়ে ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত অনেকেই সচ্ছল।

তাদের অনেকেই এসব ঘরে বসবাস না করে ভাড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রকৃত অসহায় মানুষ সরকারি এসব ঘরপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির দাবি, যাদের ভূমি ও গৃহ আছে এবং যেসব ঘরে তালা ঝুলছে ও ভাড়া দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সেগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের নামে নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হবে।

জানা গেছে, কালাই উপজেলায় মোট চার ধাপে ১৭৮ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তির নামের তালিকা চূড়ান্ত করে বরাদ্দকৃত ঘর হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু প্রায় এক বছর পর বেশ কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এসব ঘরে থাকছেন না অনেকেই। উপজেলার কাঁটাহার গ্রাম ও ম্যারের পুকুরে সরকারের দেয়া ১৪-১৫টি ঘরই রয়েছে তালাবদ্ধ।

কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান,তারা এখানে থাকেন না। থাকেন নিজস্ব বাড়িতে। যারা তালিকা প্রস্তুত করেছেন তারা প্রকৃত গৃহহীন ও ভূমিহীনদের নাম না দিয়ে তাদের পছন্দের লোকদের নাম দিয়েছেন। সঠিকভাবে তালিকা প্রস্তুত না করার কারণেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। 

সম্প্রতি উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের ম্যারেরপুকুর ও কাঁটাহার আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ৬৫টি ঘরের মধ্যে ৪২টি ঘরে বসবাস করছেন সুবিধাভোগীরা ও তাদের আত্মীয়স্বজন। ৫টি ঘরে আছে ভাড়াটিয়ার মজুতকৃত আলু ও ধান। বাকি ১৫টি ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। অনেকেই নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করে বরাদ্দকৃত ঘরে লতাপাতা, বাঁশ, খড়ি রেখেছেন। 

কাঁটাহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ পায় শামীম হোসেন। ওই ঘরটি ভাড়া নিয়ে আলু ও ধান রেখেছেন মাসুম মিয়া নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা।

এ সময় মাসুম মিয়া বলেন, শামীম তার ঘর ভাড়া রেখে নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করেন। টাকার বিনিময়ে মাসিক ভাড়ায় আমি এ ঘর ব্যবহার করছি। এতে আমার কোনো দোষ নেই।

একই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসরত আব্দুস সামাদ বলেন, ৬২টি ঘরের মধ্যে ১৩-১৪টি ঘরে একদিনও বসবাস করেননি বরাদ্দপ্রাপ্তরা। যাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে,তাদের বেশিরভাগই নিজস্ব জায়গায় ঘরবাড়ি ও জমিজমা আছে। সেজন্য তারা এখানে বসবাস করেন না।  

মাত্র হাফ কিলোমিটার দক্ষিণে মাত্রাই গ্রামে কোরবান আলীর নিজস্ব জায়গাতে বড় একটি বাড়ি থাকলেও ম্যারের পুকুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ পেলেন কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লজিক চেয়ারম্যান আমার নামের তালিকা দিয়েছেন। ছেলের জায়গা না থাকায় আমার নামের বরাদ্দকৃত ঘর ছেলেকে দিয়েছি। ওই ঘরে আপনি কেন থাকেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন,সেটা এখন বলা যাবে না।    

ম্যারের পুকুরে আরেকটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন ফেরদৌস আলী। তারও নিজস্ব জায়গায় বাড়িঘর আছে। তিনিও নিজস্থ বাড়িতেই বসবাস করেন। ঘর বরাদ্দ নিয়ে থাকছেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,ওইখানে বিদ্যুৎ নাই। অন্য কেউ থাকেন না। রাতের অন্ধকারে একা খুব ভয় লাগে সেজন্য থাকি না।

ঘর বরাদ্দের বিষয়ে মাত্রাই ইউপি চেয়ারম্যান আনম শওকত হাবীব তালুকদার লজিক বলেন, অনেক সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নেন না। সেজন্য প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন বাছাই করতে পারেন না।

তালিকার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও বেশ কয়েকজনের নাম দিয়েছিলাম। কিন্তু সবাই পায়নি। যারা পেয়েছে সবাই গৃহহীন। 

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ এসেছে এবং অভিযোগের কিছু সত্যতাও পাওয়া গেছে। বরাদ্দ বাতিল এবং নতুন করে বরাদ্দ দেয়ার কাজ চলছে। 

Link copied