দুমকীতে স্কুল শিক্ষকের লাইভে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা
প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:০৪ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত
চরিত্র নিয়ে নানা প্রশ্নের জের ধরে পটুয়াখালীর দুমকীতে লাইভে এসে রুবেল হোসেন (৩৫) নামে এক স্কুল শিক্ষক আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
এদিকে ওই শিক্ষক সম্পর্কে অনেকেই জানিয়েছেন, হয়তো নিজের চাকরি করা প্রতিষ্ঠান নিয়ে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পোস্ট করে বিপাকে পড়েছেন এবং তা থেকে রেহাই পেতে তার এ নাটকের আয়োজন। নয়তো ছাত্রীর বড় বোনকে বিয়ে না করতে পেরে হতাশ হয়ে এ কাজ করেছেন তিনি।
তবে তার লাইভ ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি আত্মহত্যা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, গলায় রশি লাগিয়ে ঝুলে পরার ১ মিনিটের মধ্যেই কয়েকজন লোক তাকে উদ্ধার করছেন। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, পুরো লাইভের শব্দ শোনা গেলেও দরজা ভেঙ্গে উদ্ধার করার শব্দ নেই কেন?
তবে রুবেল হোসেনের দেয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাইবার বুলিংয়ের স্বীকার হয়েছেন এবং নিজেকে নিরীহ বলে দাবি করেছেন তিনি।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে দুমকী একে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী ভাড়াটিয়া বাসায় এ ঘটনা ঘটেছে।
আত্মহত্যা চেষ্টাকারী স্কুল শিক্ষক রুবেল হোসেন দুমকী একে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী (ইংরেজি) শিক্ষক এবং পাশ্ববর্তী উপজেলা বাউফলের রাজনগর গ্রামের রব্বান হাওদারের ছেলে।
জানা যায়, ঘটনার দিন রুবেল তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন রকম আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে ভাইরাল হয়েছেন এলাকায়। এমনকি নিজ কর্মস্থল দুমকী একে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়েও কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দেন তিনি। এতে দুমকীর স্থানীয় জনগন নড়েচড়ে বসেন এবং ক্ষিপ্ত হন।
এ বিষয়ে দুমকী একে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাহামুদা আক্তার হেপি জানান, খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম।
শিক্ষক রুবেল হোসেনের চারিত্রিক স্খলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন, আমরা এরকম কোন অভিযোগ পাইনি।
ওই ছাত্রীর মা জানান, রুবেলে হোসেনের আচরণ শিক্ষক সুলভ মনে না হওয়ায় তাকে বাসায় পড়াতে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। সে মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখান করেছি আমরা।
তিনি আরো জানিয়েছেন, ঘটনার কয়েকদিন আগে তাদের বাসায় এসে হুইল পাউডার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শিক্ষক রুবেল হোসেন।
দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ আবিদ হাসান জানান, রাতে হাসপাতালে নিয়ে আসলে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে আত্মহত্যা চেষ্টাকারী শিক্ষক রুবেল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
দুমকী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান একাত্তর পোস্টকে বলেন, শিক্ষকের ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয়টি জেনে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌছে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করে বরিশালে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, রুবেল হোসেন ছাত্র অবস্থায় প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে নিজ এলাকা বাউফলের কলতা'র কুলসুমকে (অথৈ) ১ম বিয়ে করেন। এ সংসারে ৮ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরে ঢাকা কলেজে অনার্স পড়াকালীন সময়ে যাত্রাবাড়ি এলাকায় প্রাইভেট ছাত্রী রাবেয়া'র সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ২য় বার বিয়ে করেন।
২০১৫ সালের দিকে উপজেলার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ সৃজনী বিদ্যানিকেতনে শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে (২০১৫ সালের দিকে) ওই প্রতিষ্ঠানে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া সুমাইয়া মারজান নামে এক ছাত্রীকে আগের বিয়ের সম্পর্ক আড়াল করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে ৩য় বার বিয়ে করেন।
এতে ১ম স্ত্রী কুলসুম ক্ষীপ্ত হয়ে ডিভোর্স দেয় রুবেল হোসেনকে এবং সৃজনী স্কুলের চাকরি হারিয়ে কুমিল্লায় একটি স্কুলে চাকরিতে চলে যান।
সর্বশেষ, ২০২০ সালের দিকে দুমকী একে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এনটিআরসি'র মাধ্যমে নিয়োগ লাভ করেন রুবেল হোসেন। এরপরে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ৩য় স্ত্রী সুমাইয়াকে গ্রামের বাড়িতে রেখে একা ঢাকায় ওঠেন। সেখানেও রুবেল হোসেন নতুন করে অপর এক মেয়ের সাথে প্রেমে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এ সম্পর্কের বিষয়ে সুমাইয়া মারজান জেনে গেলে সংসারে অশান্তি নেমে আসে। এর জের ধরে সুমাইয়া মারজানকে তালাকের নোটিশ পাঠান রুবেল হোসেন।
সুমাইয়া মারজান আইনের আশ্রয় নিলে এ বছরের মার্চে মাসে সুমাইয়ার সাথে সংসার করবেন এ মর্মে আদালতে মুচলেকা দেন তিনি। রুবেল- সুমাইয়া'র সংসারে তুবা (৪) নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
গত কিছুদিন পূর্বে একই স্কুলের এক ছাত্রীকে বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়ানোর সুবাদে ওই ছাত্রীর বড় বোনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ৪র্থ বারের জন্য বিয়ের করার প্রস্তাব দেন রুবেল হোসেন। কিন্তু ছাত্রীর পরিবার এ বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি।