ত্রিপুরার ধর্মনগরে পাঁচ বাংলাদেশি তরুণীসহ দালাল যুবক আটক
প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৬ এএম

ছবিঃ প্রতীকি
আবারও ভারতের ত্রিপুরায় পুলিশের হাতে আটক পাঁচ বাংলাদেশি তরুণীসহ ইন্দো বাংলা নারী পাচারচক্রের এক পান্ডা। আটককৃতরা সকলেই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম কক্সবাজার ঠিকানার বাসিন্দা বলে দাবি করেছে। ধৃতদের মধ্যে পাঁচজন একই বয়সের (১৭-২২) তরুণী। এদের সঙ্গে গাইড হিসেবে থাকা নারী পাচারচক্রের এক যুবককেও আটক করে ভারতীয় পুলিশ।
ত্রিপুরা পুলিশ এক লিখিত বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, গতকাল বিকেলে ত্রিপুরা আসাম সীমান্তে উত্তর ত্রিপুরার ধর্ম নগর রেল স্টেশনে পাঁচ বাংলাদেশি তরুণী ও এক বাংলাদেশি যুবককে আটক করে পুলিশ। সেসময় তারা দিল্লিগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল। এদের ইতস্তত ঘুরাফেরা ও কথোপকথনে টহলরত পুলিশের সন্দেহ হয়।
তখন এদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশ করার কথা পুলিশকে জানায়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান তরুণীদের দিল্লির কোন নিষিদ্ধ পল্লীতে বেচে দেবার উদ্দ্যেশ্যেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এদেরকে গাইড করে নিয়ে যাওয়া মোহাম্মদ ফারুক নামের এক যুবককেও আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে প্রাথমিক ভাবে ধৃতদের বাংলাদেশি ধরে নিলেও পুলিশেরই একটি মহল ত্রিপুরা পুলিশের আটককৃতরা কেউই স্থায়ী বাংলাদেশি নাগরিক নয় বলে দাবি করছেন। তাদের দাবি ধৃতরা বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে এসেছে।
এই অবস্থায় ধৃতদের জেল হাজতে রেখে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় আদালত।
এই প্রাসঙ্গিক আলোচনায় এক ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তা চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দেন।
ত্রিপুরা পুলিশের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে বেশ কয়েকবছর যাবৎ রোহিঙ্গা মেয়েদের পাচার করা হচ্ছে। মূলত ত্রিপুরাকে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করেই গড়ে উঠেছে এই রুটে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অপরাধ বাহিনীর আন্তর্জাতিক নারী পাচারচক্র।
তিনি বলেন গত বেশ কয়েকবছর ধরে ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যে অসংখ্য রোহিঙ্গা মেয়ে শরণার্থী পাচার হয়ে গেছে। ২৫% এরও কম ক্ষেত্রে কখনো মাঝপথ থেকে বা একেবারে পাচারের শেষ পর্বে পাচারের ফাঁদে পড়া মেয়েদের আটক বা উদ্ধার করা গেছে। এই রুটে এই অঞ্চলের নারী পাচারচক্রের সাকসেস রেইট সবচেয়ে বেশি। তাই বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির শক্ত টার্গেট এবং ভারতের ত্রিপুরা হচ্ছে এদের সহজ ও নিরাপদ করিডোর।
বিভিন্ন কায়দায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে নারী, মেয়েদের বের করে আনা হয়। যেমন- ভারতের দিল্লি মুম্বাই কলকাতা বেঙ্গালোরের মত শহরে বিউটি পার্লার, জিম, শপিং মল, প্রাইভেট সিকিউরিটির মত নিশ্চিৎ কর্মসংস্থানের প্রস্তাব প্রলোভন।
আবার এদের কম মজুরিতে কাজ করাতে পারে। তাই উল্লেখিত কাজগুলোয় এসব শহরে রোহিঙ্গাদের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এদের সঙ্গে যা কিছু করা যায়। এদের হয়ে বিচার চাইতে কেউ আসে না।
দায়হীন অসহায় শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকবেই। তাই সবক্ষেত্রেই নিষিদ্ধ পল্লীতে বেচে দেবার জন্যই নয়, বিভিন্ন বেসরকারি চাকুরীর জন্যও রোহিঙ্গাদের ভাড়ায় চুক্তিতে নেয় আউট সোর্সিং এজেন্সিগুলো। নারী পাচারচক্রের কাছ থেকে এদের নিয়ে গ্রোমিং করিয়ে সুবিধামত কাজে লাগায় ওরা।
শরণার্থী জীবন এক অসহনীয় যন্ত্রণাময় নিরাপত্তাহীন জীবন। তাই স্বাধীন ও রঙিন জীবনের লোভে, অনেকেই বাধ্য হয়ে, কখনো প্রেমের ফাঁদে পড়ে, অনেক সময় বলপূর্বক কিংবা কিছু ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের মেয়েরা নারী পাচার চক্রের হাতে সহজেই লেগে যায়। আর এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এই নারী পাচারচক্রের নিরাপদ গড় হয়ে উঠেছে।
রোহিঙ্গা মেয়েদের ভারত সহ বিভিন্ন দেশে পাচারের জন্য ভৌগলিক অবস্থান, যোগাযোগ সুবিধা, ভাষা ও বেশভূষা জনিত কারণে ত্রিপুরাকে সহজ ও নিরাপদ করিডোর হিসেবে নিয়েছে ইন্দো-বাংলা নারী পাচারচক্রটি।